Suzuki Gixxer SF Bangla Full Review
যদি বলি লাখো মানুষের একটি স্বপ্ন সুজুকি জিক্সার তবে আমার মনে হয় কোন অংশে ভূল বলা হবে না। সুজুকি কোম্পানির সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল সিরিজ হল জিক্সার সিরিজ। আর এই সিরিজের লঞ্চ করা মডেল সুজুকি Suzuki Gixxer SF।
আজ আমরা রিভিউ করতে চলেছি এই Suzuki Gixxer SF সম্পর্কে। 2017 তে বাজারে আসা এই নতুন মডেলটিতে আগের তুলনায় কি কি নতুন সংযোজন করা হয়েছে, কি কি বাদ দেওয়া হয়েছে, ইঞ্জিন এবং বডিতে কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না, এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ, আর সর্বোপরী বাইকটি কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অর্থাৎ কারা কিনবেন সে সম্পর্কে থাকছে আমাদের নিজেস্ব মতামত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক….
সংক্ষিপ্ত বিবরন:
2017 সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বাজারে নতুন লঞ্চ করে সুজুকি জিক্সার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক। দাম নির্ধারন করা হয়েছে 2,19,950 টাকা। চোখ বুজে বলতে পারি মোটরসাইকেলটি প্রথমবার দেখলে দ্বিতীয়বার আবার ফিরে তাকাতে হবে। 150 CC সেগমেন্টে এতটা নজরকাড়া ডিজাইন সত্যিই দুর্লভ। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই বাইকটি পাওয়া যাচ্ছে।
বিস্তারিত বিবরন:
ডিজাইন ও বডি:
এক কথায় অসাধারন। জাপানি এই মডেলটিতে ডিজাইনের দিক দিয়ে কোম্পানি কোন ত্রুটি রাখে নি। সত্যি বলতে 150 সিসি সেগমেন্টের বাইকে এতটা প্রিমিয়াম আর নজরকাড়া ডিজাইন খুব কমই দেখা যায়। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে 200 সিসির উপরে রেসিং কোন মোটরসাইকেল হবে এটি। ফুয়েল ট্যাঙ্ক ডিজাইন, প্লাস্টিক শেপ এবং গ্রাফিক্সের কারনে দেখতে অসাধারন লাগে।
মোটরসাইকেলটির দৈর্ঘ্য 2025 mm, প্রস্থ 715 mm এবং উচ্চতা 1035 mm। মাটি থেকে সিটের উচ্চতা 795 mm। সিটিং পজিশনটা খুব কম্ফোর্টেবল। বাইকটির Ground Clearance অর্থাৎ মাটি থেকে বডির উচ্চতা 165 mm। 148 Kg ওজনের বাইকটিতে ফুয়েল ধারনক্ষমতা থাকছে 12 লিটারের মত এবং রিজার্ভে থাকবে 2 লিটারের মত।
বাইকটির সামনের হেডলাইটে থাকছে 12V, 35/35W একটি Halogen লাইট এবং পিছনের ব্যাক লাইটে থাকছে LED লাইট। টার্নিং লাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Clear Lense এর ৪ টি লাইট।
ইঞ্জিন:
মোটরসাইকেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 10 kW (13.41 BHP) @ 8000 RPM পাওয়ার এবং 13.8 NM @ 6000 RPM টর্ক সমৃদ্ধ 155 সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন। SOHC থাকায় ইঞ্জিনটি তাড়াতাড়ি দ্রুতগতিতে উঠতে সাহায্য করে। ১০০+ গতি উঠালেও ইঞ্জিনটি কখনো ওভার হিট হয় না। বাইকটিতে আপনি সর্বোচ্চ 130 KM/H গতি পাবেন। মাইলেজ হিসেবে শহরের মধ্যে 40 – 42 Kilometres Per Liter এবং হাইওয়েতে প্রায় 44-46 Kilometres Per Hour পাবেন।
বাইকটিতে বোর এবং স্ট্রোকের পরিমাপ যথাক্রমে 56 mm এবং 62.9 mm। এয়ার কুলিং সমৃদ্ধ বাইকটিতে ফুয়েল হিসেবে পেট্রোল এবং ইঞ্জিন লুব্রিকেন্ট হিসেবে 10W30W ধরনের লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এর ইঞ্জিন অয়েল ক্যাপাসিটি ৮৫০ গ্রাম। ফুয়েল ডেলিভারি সিস্টেম হিসেবে FI (Fuel Injection) টাইপ এবং Digital CDI ইগনিশন ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ টি গিয়ার গিয়ারবক্স সমৃদ্ধ ইঞ্জিন দ্বারা রেডি পিকাপের স্বাধ পাবেন। যে কোন সময়ে যে কোন গাড়ি বা মোটরসাইকেলকে ওভারটেক করতে আপনার কোন রকম বেগ পেতে হবে না। তবে হাইওয়েতে চালিয়ে তুলনামূলক বেশি মজা পাবেন।
সাসপেনশন ও চেসিস:
বাইকটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে Telescopic, Coil spring, Oil damped সাসপেনশন এবং পিছনে Swing Arm Type, Mono Suspension। মনোশক সাসপেনশনের কারনে যে কোন রাস্তায় চলতে খুব কম্ফোর্টেবল ফিল পাবেন আর Adjustable থাকায় ইচ্ছামত হার্ড-সফট করতে পারবেন। সামনের সাসপেনশনটিও অনেক ভাল। অলমোস্ট সাসপেনশন সেটাপ অনেক ভাল।
চেসিস হিসেবে Single Downtube ব্যবহার করা হয়েছে যা অনেক ভাল মানের।
টায়ার এবং ব্রেক:
সামনে ব্যবহার করা হয়েছে 266 mm Disc ব্রেক সমৃদ্ধ 100/80-17 M/C 52P Tubeless টায়ার এবং পিছনে 240 mm Disc ব্রেক সমৃদ্ধ 140/60R 17 M/C 63P Tubeless টায়ার। যে কোন প্রকার টার্নিং এবং রাইড খুব ভালভাবে করতে পারবেন।
এবার আসি মূল সুবিধা ও অসুবিধার দিকে…
যে কোন জিনিসের ভাল এবং মন্দ দুইটা দিক থাকে। প্রথমে খারাপ দিকগুলো অর্থাৎ অসুবিধাসমুহ জেনে নেয়া যাক।
অসুবিধাসমুহ:
সিট:
সিটের পজিশনটা অনেক ভাল কিন্তু সিটটা কম্ফোর্টেবল না। চালিয়ে মজা আছে কিন্তু বেশিক্ষন চালাতে কষ্ট হয় এই সিটের জন্য।
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম:
বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স তুলনামূলক অনেক কম। উচু নিচু রাস্তায় অনেকসময় চলতে অসুবিধা হবে। তাছাড়া রাস্তার স্পিড ব্রেকারটা তুলনামূলক একটু বড় হলে এবং ইঞ্জিনের গতি না কমালে ইঞ্জিনের সামনে নিচের দিকের প্লাস্টিক কভারটা ভেঙ্গে যেতে পারে।
নো এবিএস:
ভারতে এই একই মডেলটির এবিএস থাকলেও বাংলাদেশে সদ্য লঞ্চ করা এই বাইকটিতে কোন প্রকার এবিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয় নি। জানিনা কেন।
লো-কোয়ালিটি প্লাস্টিক:
বাইকটির সৌন্দর্য বাড়াতে যে প্লাস্টিক মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে তার কোয়ালিটি আমার কাছে তেমন ভাল মনে হয় নি। যেহেতু ১৫০ সিসি সেগমেন্টের একটি বাইক সেহেতু প্লাস্টিক কোয়ালিটিটা আরও ভাল করা উচিৎ ছিল।
হার্ড গিয়ার শিফটিং:
মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিনটা খুব সফট ও ভাল মানের কিন্তু এর গিয়ার শিফটিং বেশ হার্ড।
উইক হেডলাইট:
রাতের বেলা অন্ধকার রাস্তায় চলতে তেমন অসুবিধা হবে না কিন্তু হাইওয়েতে বা স্বল্প আলোতেও যেন এর হেডলাইটের আলোটা অসহায় হয়ে পড়ে।
শক্ত এবং দুর্বল সুইস কোয়ালিটি:
দাম বিবেচনায় সুইস কোয়ালিটিটা বেশ দুর্বল এবং হার্ড। মানটা ভাল করার দরকার ছিল।
সুবিধাসমুহ:
অনেক তো বদনাম শুনলেন এবার ভাল দিকগুলোও জেনে নেওয়া যাক…
ডিজাইন:
এক কথায় অসাধারন। মন জুড়িয়ে যাবার মত ডিজাইন। বলতে গেলে কোথাও কোন কমতি নেই। প্রথমবার তাকালে দ্বিতীয়বার ফিরে তাকানোর মত একটা ডিজাইন।
ইঞ্জিন:
এই বাইকটির ইঞ্জিনটা স্মুথ আর পাওয়ারফুল। ইঞ্জিনের সাউন্ডটাও বেশ ক্লিয়ার এবং রিফাইন একটা ইঞ্জিন। ওভার হিটিং ইসু নেই বললেই চলে। এককথায় খুব ভাল মানের পাওয়ারফুল একটা ইঞ্জিন।
সাসপেনশন:
সামনের সাসপেনশনটা খুব ভাল মানের আর পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে এডজাস্টেবল মনো সাসপেনশন। এডজাস্টেবল থাকায় ইচ্ছামত হার্ডনেস বাড়াতে ও কমাতে পারবেন। মূলত সাসপেনশনের কারনে যে কোন রাস্তায় চালিয়ে খুব মজা পাবেন।
মাইলেজ :
মোটরসাইকেলটির মাইলেজটাও তুলনামূলক অন্যান্য পালসারের থেকে বেশি। সিটির মধ্যে এর মাইলেজ প্রায় প্রতি লিটারে ৪০-৪২ কিমি এবং হাইওয়ে তে ৪৫+ কিমি। যা পালসারে অনেক বেশি হেল্ফফুল।
মিটার:
প্রথমবার দেখলে মনে হতে পারে এটা মিটার না স্মার্টফোন। কি নেই এতে? ঘড়ি, ইঞ্জিন আরপিএম, স্পিডোমিটার, ২ টি ট্রিপমিটার, ফুয়েলমিটার সবগুলোই পাবেন এতে।
আমার নিজেস্ব মতামত:
আমার মনে হয় এতে যে ইঞ্জিনটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অনেক ভাল মানের। যে কোন রাস্তায় আরামচেই রাইড করতে পারবেন তবে বেশি মজা পাবেন হাইওয়েতে এবং ইউজ এ্যাবেলিটিও খুব ভাল। সব দিক বিবেচনা করে আপনি যদি জিক্সার প্রেমী হন আর দামটা যদি খুব একটা ম্যাটার না করে তবে নিঃসন্দেহে হতে পারে এই বাইকটি আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি বাইক।
আর আপনি যদি একটি বাইক কিনবেন বলে চিন্তা করে থাকেন আর বাজেট যদি হয় এই দামের আশেপাশে তবে চোখ বন্ধ করে এই বাইকটি কিনতে পারেন। আশা করি, আপনার বাইক সম্পর্কিত মনের সমস্ত আশাগুলো এই বাইকটির মাধ্যমে পূরন করতে সক্ষম হবেন।
দীর্ঘদিন ধরে সুজুকি, বাইক প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি নাম। ব্যক্তিগতভাবে সুজুকি নাম শুনলে আমার মাঝেও একটা দুর্বলতা কাজ করে। যেহেতু …. যেহেতু আগেও সুজুকির বেশ কয়েকটা মডেল বাজারে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় এই বাইকটিও সকল বাইকারদের মন জয় করে তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পরবে।
Good
Nice
Well
Nice
Nice
Nice
Nice
Nice