প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই কেউ-ই। ডিজিটাল সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশও ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। সেই সাথে দেশে মুঠোফোন (Mobile Phone) ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব থেকেই আসছে। ডিজিটাল সেবার বিস্তৃতি ও উন্নতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের বাজারে Realme একটি বহুল আলোচিত মুঠোফোন ব্র্যান্ড। আজ আমরা রিভিউ করতে চলেছি Realme Narzo 30A সম্পর্কে।
2021-এ বাজারে আসা এই নতুন মডেলটিতে আগের তুলনায় কি কি নতুন সংযোজন করা হয়েছে, কি কি বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রসেসর এবং বডি সম্পর্কে, এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ, আর সর্বোপরী মুঠোফোনটি (Mobile Phone) কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অর্থাৎ কারা কিনবেন সে সম্পর্কে থাকছে আমাদের নিজেস্ব মতামত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
সংক্ষিপ্ত বিবরন:
2021 সালের ফেব্রুয়ারী এর শেষের দিকে আনুষ্ঠানীক ভাবে এটি ঘোষণা করা হয়। সেইসাথে ৫-ই মার্চ বাংলাদেশের বাজারে নতুন লঞ্চ করে ” Realme Narzo 30A “। সরকারীভাবে (officially) এটি ২১ -ই মার্চ বাংলাদেশের বাজারে আসে। সরকারী(officially) দাম নির্ধারন করা হয়েছে…
4GB+64GB | ১২,৯৯০ টাকা |
রিয়েল্মি Narzo 30A এর কম্বো প্যাকটির অসাধারন সব ফিচার, ডিজাইন, পারফরমেন্স আপনাকে দিবে এক অন্যমাত্রার অনুভূতি। সত্যি বলতে এর নজরকাড়া ডিজাইন , বড় ডিস্প্লে, মেগা ব্যাটারী এবং গেমিং প্রসেসর এই বাজেটে আপনার জন্য হতে চলেছে বেস্ট স্মার্টফোন। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই মুঠোফোনটি Realme Narzo 30A পাওয়া যাচ্ছে।
বিস্তারিত বিবরন:
ডিজাইন ও বডি:
চায়না কোম্পানি Realme ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী তে তাদের ব্রান্ড নিউ ফোন ” Realme Narzo 30A” ঘোষণা করেছিল। এই মডেলটিতে ডিজাইনের দিক দিয়ে কোম্পানি কোন ত্রুটি রাখে নি। সত্যি বলতে ১২,৯৯০ টাকা দামে এতটা প্রিমিয়াম আর নজরকাড়া ডিজাইন খুব কমই দেখা যায়। এর ব্যাক পার্টের 3D ডিজাইনের কারনে মোবাইল ফোনটাকে দেখতে অসাধারন লাগে।
মোবাইলটির দৈর্ঘ্য 164.5 mm, প্রস্থ 75.9 mm এবং থিকনেস 9.8 mm। যেটা হাতে ধরতে বেশ কম্ফোর্টেবল । এর সামনে গ্লাস এর প্রোটেকশন এবং বডি ও পিছনের অংশ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এর সামনে অর্থাৎ ডিসপ্লে এর ঠিক উপরে মাঝ বরাবর একটি টাইপ ভি এর নচ রয়েছে এবং ফোনটির পিছনে অর্থাৎ ব্যাকপার্টের উপরে বাম পাশে বর্গাকার আক্ৃতির ক্যামেরা বাম্প বসানো হয়েছে যেটা দেখতে বর্তমান সময় খুবই স্বাভাবিক।এর পাওয়ার অন অফ বাটন ও ভলিউম আপ/ডাউন বাটন ডিসপ্লে এর ডান পাশে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটিকে ব্যাকপার্টের উপরের দিকে সেট করা হয়েছে। যেগুলো আসলেই বেশ সুবিধাজনক স্থানে দেওয়া হয়েছে। ফোনটির নিচের দিকে দেয়া হয়েছে 3.5 mm এর অডিও জ্যাক, মাউতস্পিকার (Mic) এবং লাউডস্পিকার। আর ফোনটির উপরে ফ্রন্ট ক্যামেরার উপরে দেয়া হয়েছে ইয়ারস্পিকার। রেগুলার পোরট’স ও বাটন ঠিকঠাক আছে, কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে এতে রয়েছে ইউএসবি টাইপ ছি (USB Type-C 2.0)। এতে আরো থাকছে ওটিজি (USB On-The-Go) সুবিধা।
মোবাইলটি বাজারে 2 টি রঙে পাওয়া যাবে। রংগুলি হলো, লেসার ব্ল্যাক(Laser Black) এবং লেসার ব্লু(Laser Blue) ।
ডিসপ্লে:
ফোনটিতে রয়েছে ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন সমৃদ্ধ 16M color সাপোর্টেড ভি-টাইপ নচ যুক্ত ডিসপ্লে । ডিসপ্লেটির 270 এর পিপিআই সহ 720 x 1600 পিক্সেলের রেজোলিউশন রয়েছে যেটা এইচডি প্লাস ডিসপ্লে । ডিসপ্লেটিতে পাবেন স্মুত টাচ রেসপন্স এবং অসাধারন মিডিয়া ভিউএর অভিজ্ঞতা । দিনের আলোতে এই ডিস্প্লে আপনাকে দিবে পর্যাপ্ত ব্রাইটনেস,কেননা এতে রয়েছে ৫৭০ নিটস(পিক) ব্রাইটনেস।
সেন্সর:
ফোনটিতে সেন্সর হিসেবে থাকছে অ্যাক্সিলোমিটার, ম্যাগ্নেটমিটার, গাইরো, প্রক্সিমিটি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জিপিএস ও লাইট সেন্সর। রিয়ার-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্টটি বেশ নির্ভুল ও দ্রুত কাজ করে। ফেস আনলকও প্রায় সঠিক ও দ্রুত কাজ করে।
নেটওয়ার্ক:
ফোনটিতে রয়েছে একই সাথে ২টা ন্যানো সিম এবং ১টি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহার এর সুবিধা। ফোনটি 3 জি এবং 4 জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা দিবে। তাছাড়া জিপিআরএস এবং ইডিজিই সুবিধাও রয়েছে । এর নেটওয়ার্ক স্পীড হিসেবে থাকছে এইচএসপিএ 42.2 / 5.76 এমবিপিএস, এলটিই-এ। যেটা এই বাজেটের ফোনের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
পারফরমেন্স:
ফোনে অ্যান্ড্রয়েড 10 (Q) কে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে । এতে রিয়েলমি এর নিজস্ব ইউআই realme UI 1.0 ব্যাবহার হয়েছে যেটা আপনাকে এক অসাধারন ইউজার ইন্টারফেস এর অভিজ্ঞতা দিবে । এর প্রসেসর হিসেবে মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫ এর অক্টা-কোর (2 x 2.0 গিগাহার্টজ কর্টেক্স A75 এবং 6 x 1.8 গিগাহার্টজ কর্টেক্স A55) প্রসেসর ব্যাবহার করা হয়েছে।এটি একটি গেমিং প্রসেসর।
র্যাম এবং রম:
রিয়েলমি (Realme) কোম্পানি ( 3 জিবি / 32 জিবি ) এবং ( 4 জিবি / 64 জিবি ) -র ২ টি ভেরিয়েন্টে ফোনটি চালু করেছে।
গেমিংঃ
আমরা সকলেই জানি রিয়েল্মি এর নারজো সিরিজ মূলতোই গেমারদের উদ্দেশ্য করেই বাজারে তাদের বেস্ট বাজেটে গেমিং ডিভাইস টি লঞ্চ করে। Realme Narzo 30A এর বেলায় ও তার ব্যতিক্রম ঘটে নাই। বিশেষ করে লো বাজেটে গেমারদের কথা চিন্তা করেই এই ডিভাইস টি ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। এতে ব্যবহার করা মিডিয়াটেক এর গেমিং চিপসেট(MediaTek Helio G85 (12nm)) টি এই বাজেটে অসাধারন একটা বাজেট কিলার গেমিং ডিভাইস। চলুন এক নজরে দেখে নেই এর গেমিং কোয়ালিটি এবং স্কোর……..
ক্যামেরা:
ফোনের পিছনে ২টি ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে যার মেইন ক্যামেরা হিসেবে 13 এমপি f/2.2 এপাচার এর ওয়াইড এঙ্গেল সেন্সর+ 2 এমপি f/2.4 সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা রয়েছে যার সাহায্যে আপনি সুন্দর মানের ছবি এবং সর্বোচ্চ 1080p@30/fps, 720@30fps, gyro-EIS ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন । এছাড়া এর সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ফ্রন্ট এ রয়েছে 8 এমপি সেলফি ক্যামেরা যার সাহায্যে আপনি সুন্দর মানের ছবি এবং সেলফি তুলতে পারেন। আপনি সামনের ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ 1080@30fps, 720@30fps ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক Realme Narzo 30A দ্বারা তোলা কিছু স্যাম্পল ছবি……
Selfie
ব্যাটারি:
মোবাইলটিতে নন-রিমুভয়্যবল লিথিয়াম পলিমার এর 6000 এমএএইচ মেগা ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যার সাহায্যে আপনি গড়ে 140 ঘন্টা অবধি স্বাভাবিক ভাবে চালাতে পারবেন, 17 ঘন্টা ভিডিও প্লেব্যাক এবং 19 ঘন্টা নেট ব্রাউজিং করতে পারবেন। সেই সাথে আপনি টানা ১০ ঘন্টা গেমিং এক্সপেরিয়েন্স পাচ্ছেন এই মনস্টর গেমিং ডিভাইস টি দ্বারা। পুরো চার্জে, আপনি 3G নেটওয়ার্কে এ প্রায় 42 ঘন্টা পর্যন্ত কথা বলতে পারেন। ফোনটি পুরো চার্জের প্রায় 2.3 ঘন্টা সময় নেবে 18W দ্রুত চার্জিং সাপোর্টে। ওভারঅল আপনি যদি স্বাভাবিক ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ফুল চার্জে অনায়সে ২ দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
এবার আসি মূল সুবিধা ও অসুবিধার দিকে…
যে কোন জিনিসের ভাল এবং মন্দ দুইটা দিক থাকে। প্রথমে খারাপ দিকগুলো অর্থাৎ অসুবিধাসমুহ জেনে নেয়া যাক।
অসুবিধাসমুহ:
বডি:
এর বডি প্লাস্টিক এর হওয়ায় এতে সহজে দাগ পড়ে যায় । এজন্য সবসময় ব্যাক কভার ব্যাবহার করুন। তবে হতাসার ব্যাপার হলো রিয়েল্মি ডিভাইসটির সাথে দিচ্ছে না কোনো প্রটেক্টিভ কেস(ব্যাক কভার)।
ডিসপ্লে:
এর ডিসপ্লে তে নিম্ন মানের প্রটেক্টিভ গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে থাকছে না কোনো গরিলা গ্লাস প্রোটেকশন । তাই কোনো প্রটেক্টিভ গ্লাস ব্যবহারের অনুরোধ রইল ।
পারফরমেন্স:
বর্তমান এর সেরা গ্রাফিক্স গেম গুলো সাধারন গ্রাফিক্সে খেললে বেশ ভালো পারফরমেন্স দিবে আশা করা যায়। কিন্তু এই ভালো পারফরমেন্স বেশি দিন আশা করা যাবে না। মিডিয়াটেক এর প্রসেসর কম বাজেটে যতো ভালোই কনফিগ দিক না কেনো তা টেনে টুনে ৬/৭ মাস টার্বো গতিতে চলবে। একটা সময় এসে এর পারফরমেন্স ড্রপ করতে থাকবে।
সুবিধাসমুহ:
অনেক তো বদনাম শুনলেন এবার ভাল দিকগুলোও জেনে নেওয়া যাক…
ডিজাইন:
এক কথায় অসাধারন। মন জুড়িয়ে যাবার মত ডিজাইন। প্রথমবার তাকালে দ্বিতীয়বার ফিরে তাকানোর মত একটা ডিজাইন। এর ব্যাক প্যানেলের 3D টেক্সার টা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
ডিসপ্লে:
ফোনটিতে রয়েছে ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন সমৃদ্ধ 16M color সাপোর্টেড ডিসপ্লে । এইচডি প্লাস এবং বড় ডিসপ্লে হওয়ায় ডিসপ্লেটিতে পাবেন অসাধারন এক মিডিয়া ভিউএর অভিজ্ঞতা । সেই সাথে গেমিং এ পাবেন ফাল্গশিফ লেভেলের এক্সপেরিয়েন্স।
সাউন্ড:
ফোনটির নিচের দিকে দেয়া হয়েছে ৩.৫ এম এম এর অডিও জ্যাক, মাউতস্পিকার (Mic) এবং লাউডস্পিকার। আর ফোনটির উপরে ফ্রন্ট ক্যামেরার উপরে দেয়া হয়েছে ইয়ারস্পিকার, যে গুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি সত্যিই প্রশংসনীয় ।
স্টোরেজঃ
এতে থাকছে ১২৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ এর সুবিধা
ব্যাটারি:
মোবাইলটিতে নন-রিমুভয়্যবল লিথিয়াম পলিমার এর 6000 এমএএইচ এর মেগা ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যা আপনাকে ভুলিয়েই দিবে ফোন কে রিচারজ করার কথা। এর ১৮ ওয়াট ফাস্ট চারজার আপনার ফোনটিকে দ্রুত সময়ে চার্জ হতে সাহায্য করবে। এতে রয়েছে দারুন একটি ফিচার, এই ফোনটির মাধ্যমে আপনি আপনার অন্য ডিভাইস কে ও চার্জ করে নিতে পারবেন।
যাদের জন্য এই ফোনটি:
বিশেষ করে গেমার দের জন্য এই ফোন টি বেস্ট একটি চয়েজ ।তবে মোডারেট সকল ধরনের ইউজারদের জন্য এই ফোনটি সেরা।
To Know more about Realme Narzo 30A Full Specification and Review Click Here
আমার নিজেস্ব মতামত:
আমার মনে হয় এতে যে প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অনেক ভাল মানের। সব দিক বিবেচনা করে আপনি যদি সাধারণ ব্যাবহারকারী এবং মিডিয়া প্রেমি হন আর দামটা যদি খুব একটা ম্যাটার না করে তবে নিঃসন্দেহে হতে পারে এই মোবাইলটি আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি মোবাইল।
আর আপনি যদি একটি মোবাইল কিনবেন বলে চিন্তা করে থাকেন আর বাজেট যদি হয় এই দামের আশেপাশে তবে চোখ বন্ধ করে এই মোবাইলটি কিনতে পারেন। আশা করি, আপনার মোবাইলটি সম্পর্কিত মনের সমস্ত আশাগুলো এই রিভিউ ব্লগ এর মাধ্যমে পূরন করতে সক্ষম হয়েছি।
দীর্ঘদিন ধরে রিয়েলমি, মোবাইল প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি নাম। ব্যক্তিগতভাবে রিয়েলমি নাম শুনলে আমার মাঝেও একটা দুর্বলতা কাজ করে। যেহেতু আগেও রিয়েলমির বেশ কয়েকটা মডেল বাজারে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় এই মোবাইলটিও সকল মোবাইল ব্যাবহারকারীদের মন জয় করে তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পরবে।
BDPrice.com.bd পরিবারের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের ফেসবুক পেজ BD Price।
Market less hoba???
Market less hoba???
Bangladesh a na ke
Samsung Galaxy M12 এর সুবিধা অসুবিধা একটু বলবেন? ইমেইল করে জানিয়েন পিল্জ।