Bajaj Pulsar 150CC Twin Disc Bangla Review
যদি বলি লাখো মানুষের একটি স্বপ্ন আর সেটি বাজাজ পালসার, তবে আমার মনে হয় কোন অংশে ভূল বলা হবে না। বাজাজ কোম্পানির এই পালসার মডেলটি হল এমন একটি বাইক যা মানুষের মাঝে ১৫০ সিসি বাইকের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। ১৫০ সিসি সেগমেন্টে এই পালসারই একমাত্র বাইক যা প্রথম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সুনামের সাথে মানুষের মন জয় করে যাচ্ছে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই পালসারেও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আজ আমরা জানতে চলেছি নতুন লঞ্চ হওয়া বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক ইউ জি ৫ সম্পর্কে। সদ্য বাজারে আসা এই নতুন মডেলটিতে কি কি নতুন সংযোজন করা হয়েছে, কি কি বাদ দেওয়া হয়েছে, ইঞ্জিন এবং বডিতে কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না, এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ, আর সর্বোপরী বাইকটি কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অর্থাৎ কারা কিনবেন সে সম্পর্কে থাকছে আমাদের নিজেস্ব মতামত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক….
সংক্ষিপ্ত বিবরন:
2019 সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বাজারে নতুন লঞ্চ করে বাজাজ বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই বাইকটি পাওয়া যাচ্ছে। বাইকটির ডিজাইন করা হয়েছে পালসারের আগের মডেল বাজাজ পালসার এর মত তবে গ্রাফিক্সে বেশ কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাইকটি ব্লাক ব্ল , ব্লাক রেড ও ব্লাক ক্রোমি এই তিনটি কালারে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাইকটিতে অতিরিক্ত যা যা থাকছে:
নিউ বডি গ্রাফিক্স:
বাইকটিতে আগের পালসার অর্থাৎ UG4 মতই অনেকটা দেখতে। তবে এর লুকটা বেশ বড়সড়। তাছাড়া বডি স্টিকারটাও দেখতে আগের থেকে বেশ আকর্ষনীয় লাগে। এককথায় মন জুড়িয়ে যাবার মত ডিজাইন।
স্প্লিট সিট:
এটিতে স্প্লিট অর্থাৎ দুটি সিট ব্যবহার করা হয়েছে। সিটটি বেশ কমফোর্টেবল এবং লং রাইডের জন্য বেশ কার্যকরী।
সামনে ও পিছনের ডিস্ক ব্রেক:
বাইকটিতে সামনে এবং পিছনে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
পিছনের টায়ার:
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 120/80–17 সাইজের Tubeless টায়ার। টায়ারটির জন্য বাইকটি দেখতে যেমন প্রিমিয়াম লাগে তেমনি কন্ট্রোলিংটাও ভাল অর্থাৎ রাইড করে বেশ মজা পাচ্ছিলাম।
নতুন মডিফাই ইঞ্জিন:
পালসারের আগের ভার্ষনটি থেকে এই ভার্ষনটিতে ইঞ্জনে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইঞ্জিনটি বেশ হালকা আর রিফাইন বলে মনে হয়েছে।
বড় চেইন স্পোকেট:
চেইন স্পোকেটা বেশ বড়সড়।
মোটা টেলিস্কোপিক ফর্ক:
সামনের টেলিস্কোপিক ফর্কটা বেশ মোটা।
বিস্তারিত বিবরন:
ডিজাইন বডি:
এমন কোন বাইকপ্রেমী মানুষ নেই যারা পালসারের ডিজাইন সম্পর্কে অবগত নন। তবে হ্যাঁ, বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক মডেলটাতে অনেকটা আগের মত ডিজাইন করা হয়েছে। প্রথম দেখাতে আগের মডেলটার মত মনে হতে পারে কিন্তু ভালভাবে খেয়াল করলে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়বে। এবার আসুন একনজরে সেই পরিবর্তনগুলো দেখে আসি।বাইকটির দৈর্ঘ্য 2035 mm, প্রস্থ 765 mm এবং উচ্চতা 1115 mm। বাইকটির Ground Clearance অর্থাৎ মাটি থেকে বডির উচ্চতা 165 mm। 144 Kg ওজনের বাইকটিতে ফুয়েল ধারনক্ষমতা থাকছে 15 লিটারের মত।
সাসপেনশন:
সাসপেনশনটা অনেক ভাল মানের। সামনের সাসপেনশন হিসেবে থাকছে Telescopic, 37 mm Conventional fork এবং পিছনে থাকছে Twin shock absorber, gas-filled with Canister Suspension।
ব্রেক এবং টায়ার:
সামনে থাকছে 280 mm এর Disc (Single Channel ABS) এবং পিছনে 230 mm এর Disc Brake। ব্রেকিংটা অনেক ভাল কাজ করে।
সামনের টায়ারটি হল 17-inch Alloy Wheel যুক্ত 80/100-17 সাইজের Tubeless Tire এবং পিছনের টায়ারটি 17-inch Alloy Wheel যুক্ত 120/80–17 সাইজের Tubeless Tire। মূলত টায়ারটির কারনে বাইকটি অনেক প্রিমিয়াম লুক দেয় এবং কন্ট্রোলিংটাও অনেক ভাল পাওয়া যায়।
ইঞ্জিন:
পালসারের আগের ভার্ষনটি থেকে এই ভার্ষনটিতে ইঞ্জনে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইঞ্জিনটি বেশ হালকা আর রিফাইন বলে মনে হয়েছে। তবে এই ইঞ্জিনটিতে আগের তুলনায় পাওয়ার ১ এইচ পি কমিয়েছে এবং টর্ক ১ এইচ পি বাড়িয়েছে।
মোটরসাইকেলটিতে থাকছে 4-Stroke, 2-Valve, Twin Spark, BSIV Compliant DTS-i Engine এর 149.50 cc র একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন যার 10.3 KW (14 PS) @ 8500 RPM এবং 13.25 NM @ 6500 RPM Toque সমৃদ্ধ। এটির অফিসিয়াল সর্বোচ্চ স্পিড প্রতি ঘন্টায় 115 KM/H এবং প্রতি লিটার তেলে প্রায় 65 KM/l বলে বলা হয়েছে। কিন্তু বাইকটির টেস্টে এটি প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ 120 KM/H উঠাতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রতি লিটার তেলে City তে 45 KM/L এবং Highway তে 50 KM/L অতিক্রম করতে পারে।
ইঞ্জিনটি নতুন অবস্থায় বেশ দুর্বল দুর্বল মনে হয় কিন্তু কয়েকদিন গেলে অর্থাৎ ইঞ্জিন ফ্রি হবার পর এটি ঠিক হয়ে যায়। তবে ৮০ কিমি/ঘন্টা উঠানোর পর ইঞ্জিনে বেশ ভাইব্রেশন লক্ষ্য করা যায়।
গিয়ার পরিবর্তন খুব স্মুথ। ২ ও ৩ নং গিয়ার শর্ট রেডি। মূলত ভাল মাইলেজের কারনেই এটা করা হয়েছে।
এবার আসি মূল সুবিধা ও অসুবিধার দিকে…
যে কোন জিনিসের ভাল এবং মন্দ দুইটা দিক থাকে। প্রথমে খারাপ দিকগুলো অর্থাৎ অসুবিধাসমুহ জেনে নেয়া যাক।
অসুবিধাসমুহ:
কিক স্টার্ট নেই:
অবাক হলেন? আমারও প্রথমে শুনে খারাপ লেগেছিল কিন্তু কি আর করা। এখানেই বুঝি সেরা এই বাইকটির অপূর্নতা থেকে গেল।
নো এবিএস:
ভারতে এই একই মডেলটির এবিএস থাকলেও বাংলাদেশে সদ্য লঞ্চ করা এই বাইকটিতে কোন প্রকার এবিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয় নি। জানিনা কেন।
পূরনো মিটার:
মিটারটিও সেই আগের পূরনো মিটার। শুধুমাত্র লাইটিং বাদে এতে আর তেমন কোন পরিবর্তন নেই বললেই চলে। মিটারটিতে থাকছে এনালগ আরপিএম মিটার, ডিজিটাল স্পিডোমিটার, ফুয়েল মিটার ও ২ টি ট্রিপ মিটার। কিছু নটিফিকেশন সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিগেটর সাইডে মেসেজ আকারে দেখানো হয়েছে।
ইঞ্জিন ভাইব্রেশন:
৬০০০ আরপিএম এর উপর যত স্পিড উঠানো হয় ততই ইঞ্জিন ভাইব্রেশন লক্ষ্য করা যায়। ৮০ র উপরে যতই স্পিড উঠানো হয় মনে হয় বাইকের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।
আগের লুক:
হালকা পরিবর্তন থাকলেও মূল লুকটা আগের মতই।
সুবিধাসমুহ:
অনেক তো বদনাম শুনলেন এবার ভাল দিকগুলোও জেনে নেওয়া যাক…
ডিজাইন:
এক কথায় অসাধারন। মন জুড়িয়ে যাবার মত ডিজাইন। বলতে গেলে কোথাও কোন কমতি নেই।
ইঞ্জিন:
এই বাইকটির ইঞ্জিনটা আগের পালসার মডেলগুলোর তুলনায় বেশি স্মুথ আর পাওয়ারফুল। ইঞ্জিনের সাউন্ডটাও বেশ ক্লিয়ার এবং বেসটাও বেশি। মনে হয়েছে পালসারের মডেলগুলোর মধ্যে সবথেকে স্মুথ আর রিফাইন ইঞ্জিন হল এটি।
বডি এবং সাসপেনশন:
বডিটা বেস বড়সড় এবং বিল্ড কোয়ালিটিও অসাধারন। আর সাসপেনশনটাও আগের থেকে মোটা। বাংলাদেশের বাজারে পালসারের মধ্যে এটাই হল সবচেয়ে প্রিমিয়াম ডিজাইনের।
মাইলেজ :
মোটরসাইকেলটির মাইলেজটাও তুলনামূলক অন্যান্য পালসারের থেকে বেশি। সিটির মধ্যে এর মাইলেজ প্রায় প্রতি লিটারে ৪৫ কিমি এবং হাইওয়ে তে ৫০ কিমি। যা পালসারে অনেক বেশি হেল্ফফুল।
স্প্লিট সিট :
মোটরসাইকেলটিতে বেশ কম্ফোর্টেবল দুটি স্প্লিট সিট ব্যবহার করা হয়েছে। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা পরিবারের টুরের জন্য উপযোগী একটা বাইক।
সার্ভিস সেন্টার :
বাংলাদেশে যতগুলো মোটরসাইকেল কোম্পানি রয়েছে তার ভিতর বাজাজের সেলস এবং সার্ভিস সেন্টার সবচেয়ে বেশি। লক্ষ করে থাকবেন আপনার আশেপাশেই কোন না কোন একটি সেলস ও সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। অথবা যে কোন প্রয়েজনে খোঁজ নিয়ে চলে যাবেন আপনার নিকটতস্থ কোন সেলস ও সার্ভিস সেন্টারে।
আমার নিজেস্ব মতামত:
আমার মনে হয় এতে যে ইঞ্জিনটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অন্য আগের পারসারগুলোর তুলনায় বেশ ভাল। লং রাইডের ক্ষেত্রে আগের পালসারের থেকে বেশি মজা পাবেন এবং ইউজ এ্যাবেলিটিও খুব ভাল। সব দিক বিবেচনা করে আপনি যদি পালসার প্রেমী হন আর দামটা যদি খুব একটা ম্যাটার না করে তবে নিঃসন্দেহে হতে পারে এই বাইকটি আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি বাইক।
আর আপনি যদি একটি বাইক কিনবেন বলে চিন্তা করে থাকেন আর বাজেট যদি হয় এই দামের আশেপাশে তবে চোখ বন্ধ করে এই বাইকটি কিনতে পারেন। আশা করি, আপনার বাইক সম্পর্কিত মনের সমস্ত আশাগুলো এই বাইকটির মাধ্যমে পূরন করতে সক্ষম হবেন।
দীর্ঘদিন ধরে পালসার, বাইক প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি নাম। ব্যক্তিগতভাবে পালসার নাম শুনলে আমার মাঝেও একটা দুর্বলতা কাজ করে। যেহেতু বাজাজ Bajaj Pulsar 150 নতুন বাজারে লঞ্চ করেছে তারপরও বিশ্বাস এটি বাজারে পালসারের জায়গাটা ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
good
Nice